রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নির্মিত হয়েছে বিজয়ের স্মৃতিস্তম্ভ। এছাড়া স্মৃতিসৌধ, স্মৃতি ফলক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এলাকায় এলাকায় ছড়িয়ে আছে বধ্যভূমি। মুক্তিযুদ্ধের সেই স্মৃতিই বহন করছে সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়ন। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে সেখানে স্থাপন করা হয়েছে বিজয়ের স্মৃতিস্তম্ভ, স্মৃতিসৌধ, স্মৃতি ফলক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭১ সালে সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলে সাঘাটা-ফুলছড়ির কয়েকটি মুক্তিযোদ্ধার সশস্ত্রদল পাকিস্তান হানাদার বাহীনির সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে ৪ ডিসেম্বর পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হন পাঁচ বীর মুক্তিযোদ্ধা।
তারা হলেন – বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সোবহান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনি, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহেদুল ইসলাম বাদল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাবেজ আলী।
এ যুদ্ধে সে দিন ২৭ পাকিস্তানি সেনাও নিহত হয় । পর দিন ৫ ডিসেম্বর ওই পাঁচ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ চরাঞ্চল থেকে গরুর গাড়িতে বহন করে নিয়ে এসে সাঘাটা উপজেলার তৎকালীন সগুনা ইউনিয়নের ধনারুহা এলাকায় (বর্তমান মুক্তিনগর ) সমাহিত করা হয় ।
পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি উজ্জীবিত করতে এবং পাঁচ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি ধরে রাখতে ১৯৮৫ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের যৌথ উদ্যোগে পুটিমারী এলাকা থেকে সগুনা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন স্থানান্তর করে ধনারুহায় নিয়ে আসা হয় এবং সগুনা ইউনিয়নের নাম পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় মুক্তিনগর।
ইউনিয়নের নাম পরিবর্তনের সঙ্গে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে ও মুক্তিযুদ্বের স্মৃতি উজ্জীতি রাখতে ধনারুহায় স্থাপন করা হয়, মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর ও স্মৃতিসৌধ। সেখানে পাঁচ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে প্রতিবছর পালন করা হয় স্মরণসভা। এর ফলে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারছে। কেবল ইউনিয়নের নামই মুক্তিনগর করা হয়নি, ধনারুহায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে মুক্তিনগর স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর, মুক্তিনগর কমিউনিটি ক্লিনিক, মুক্তিনগর উচ্চ বিদ্যালয় ও মুক্তিনগর ইনিয়ন কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে মুক্তিনগর ইউনিয়নের নাম শুনলেই মানুষের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত হয়। এই নামকরণের মধ্য দিয়ে মক্তিযুদ্ধের স্মৃতি তরুণ প্রজন্মের মাঝে চিরস্বরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করা মুক্তিনগর ইউনিয়নটি সারাদেশে অনন্য দৃষ্টন্ত হয়ে থাকুক তরুণ প্রজন্মের হৃদয়ে এমন প্রত্যাশা সচেতন মহলের।
মুক্তিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, এই মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ও স্মৃতিসৌধের কারণে শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সহজেই জানতে পারছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরবর্তী প্রজন্মও জানতে পারবে।
সাঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আজহার আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানে সরকারি উদ্যোগে আরও উন্নয়নের প্রত্যাশা করছি।
মুক্তিনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আহসান হাবীব লায়ন বলেন, মুক্তিনগর ইউনিয়নটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহন করছে। এটা এলাকাবাসীর অহংকার।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসাহাক আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।